কোন কথা তার
প্রাক্তন 🖤
পর্বঃ ০৩
আমিও উঠে সেদিকে যাত্রা শুরু করলাম। কারণ মনের মাঝে হাজারো প্রশ্নের তোলপাড় চলছে। লাগছে যেন সবকিছু একটি সূত্রে গাঁথা।
পিছন বাবা মা ভাই ভাবি সবাই ডেকেছে। কিন্তু আমার সেদিকে কোন খেয়ালই ছিল না। সবকিছু তোয়াক্কা না করে সেই ঘরে নক করে যখন ঘরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে গিয়ে আমি অনেকটাই অবাক হয়ে গেলাম।
কারণ ভেতরে এমন কিছু দেখতে হবে তা আমার কল্পনাতেও ছিল না। কারণ যে মানুষটার চেহারা আমি কল্পনায় এঁকেছি আর যাকে সামনে দেখছি দু'টোর মাঝে আকাশ পাতাল তফাত।
ঘরের ভেতর বারো কিংবা তেরো বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি এটা ওটা আঁকাআকি করতেছিল। তবে আমায় দেখে থেমে গেল।
আমাকে দেখে মেয়েটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
আপনি? এই ঘরে? ভুলে চলে এসেছেন? (মেয়েটি)
আমায় দেখে একটু ইতস্তত হলো না। বরং শান্ত ভাবেই বললো। এমন ভাবে কথাটা বললো যেন আমি তার পরিচিত কেউ।
আমিও নিজেকে শান্ত করে জবাবে বললাম,
তুমি কি আমায় চিনো? আমাকে এভাবে দেখে ভয় বা বিরক্তির ছাপ কেন নেই তোমার চেহারায়? (আমি)
হ্যা চিনি তো। আপনি তো লিলু আন্টিকে দেখতে এসেছেন। তা ছাড়া চেহারা নিয়ে কিসব বলছেন? বুঝতে পারতেছি না। (মেয়েটি)
তার মানে যাকে দেখতে এসেছি তার নাম লিলু। কিন্তু এখন তো এসব জানার বা বুঝার সময় নেই। তাই তাকে প্রশ্ন করলাম,
তোমার নামটাই বা কি? তোমার আন্টিকে কে সাজিয়েছে? (আমি)
আমার নাম নিপা। আমিই তো সাজিয়েছি আন্টিকে। কেন দেখতে খারাপ হয়েছে নাকি? নালিশ করতে এসেছেন? (নিপা)
কিহহ!! তুমি? এরকম করে সাজানো তোমায় কে শিখিয়েছে? আর আমার লাগবে সেটা কি করে জানলে? (আমি)
আমি আমার আম্মুর থেকে শিখেছিলাম যখন ছোট ছিলাম। তবে আপনার ভালো লাগবে সেটা শুধু আন্দাজ করেই বলেছিলাম। (নিপা)
তোমার আম্মুকে একটু ডাকো। তোমার আম্মুর সাথে কথা বলতে চাই। (আমি)
এ কথাটি বলার পর নিপা একটু চুপচাপ হয়ে গেল। মন খারাপ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
আমার আম্মু মারা গেছে যখন আমার ৭ বছর বয়স। (নিপা)
আমি দুঃখিত। আমি আসলে জানতাম না। মন খারাপ কর না। তোমার আম্মু তোমার পাশেই আছে। সেই দূর থেকে তোমার উপর নজর রাখছে। (আমি)
ধমকের সুরে পিছন থেকে বললো,
মাহিন তুই কি শুরু করেছিস বল তো? মানসম্মান কি কিছুই রাখবি না? কে না কে সাজিয়েছে তা দেখার জন্য এরকম একটা মহল থেকে সব ছেড়ে ছুটে চলে এলি। চল এখন আমার সাথে। (মা)
কিছুই বলতে পারলাম না। কারণ এখানে তো আমি এসেছি লিলুকে দেখতে। পছন্দ হলে হয়তো তার সাথে বিয়েও দিয়ে দিবে।
মায়ের একগাদা বকা শুনে তার পিছন পিছন হেঁটে আবারও সেই আগের অবস্থানে চলে আসলাম। তবে নিপার সাথে আমার কথা যেন অসমাপ্ত রয়ে গেছে।
আবার কথাবার্তা চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের কথাবার্তা শেষ হলে আমাদের দু'জন কে একটি ঘরে আলাদা ভাবে কথা বলতে পাঠায়।
তবে লিলুর মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে আমায় বিয়ে করতে রাজি। যদি এখনি করতে বলে তাহলে এখনি করে নিবে। বিষয়টা কেন জানি না সুবিধার টিকছে না।
আমরা দু'জন সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছি। মিনিট পাঁচেক হয়ে গেছে কেউ কথা বলছি না। সে হয়তো মেয়ে হয়ে আগে কিভাবে বলবে সেটা ভেবে চুপচাপ আছে। তবে আমি তো অতীত ভেবে নিরব হয়ে আছি।
নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম,
আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি? যদি কিছু মনে না করেন তো!! (আমি)
হুম করেন। তবে কেন জানি মনে হচ্ছে প্রশ্নটা আমাদের সম্পর্কের বাইরে হবে। (লিলু)
হতে পারে!!! (আমি)
সমস্যা নাই বলেন। (লিলু)
আচ্ছা নিপা মেয়েটি কে? কি হয় আপনাদের? (আমি)
মুচকি হেসে জবাব দিল,
বলেছিলাম সম্পর্কের বাইরের প্রশ্নটাই করবেন। আর সেটাই হলো তো। তাহলে শুনুন, নিপার মা নেই। সাতবছর আগেই মারা গেছে। নিপা থাকে তার নানার সাথে। এখানে এসেছে তার খালাকে খুঁজতে। তার নানা নিপা নিয়ে কত জায়গায় খুঁজবে। তাই আমাদের মেহমান হয়ে আছে। আর নিপা সারাদিন আমার সাথেই থাকে। এতে দু'জনের সময়টাই কেটে যায়। (লিলু)
ওহহ আচ্ছা। চলুন অনেকটা সময় পার হয়ে গিয়েছে। (আমি)
আমাদের ব্যাপারে কথা না বলেই চলে যাবেন? (লিলু)
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলাম,
আপনাদের বাসায় তো আরো কিছুদিন রয়েছি। এখানে এমনিতেই একটু সময় লেগে গেছে। দেরি হলে তারা নানান কথা ভাববে। আমাদের সময়টা নাহয় পরের জন্য উঠিয়ে রাখলাম। (আমি)
মাথা নিচু করে শুধু আচ্ছা বললো। তারপর চলে আসলাম আবারও সেই বিরক্তিকর মহলে।
দেখাদেখির সভা শেষ হওয়ার পর গ্রাম ঘুরে দেখার উছিলায় বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য আমার দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন। মিথ্যে বলার কারণটা খুঁজে পেলাম না।
স্টেশনে পৌঁছে এদিক ওদিক তাকালাম। আবারও সেই করুন দৃশ্য। সবে মাত্র ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি থেমেছে। লোকজন নামতে ব্যস্ত। আর অন্যদিকে ছায়া প্রত্যেকের কাছে হাত ফেলাতে ব্যস্ত।
কেন জানি নিজেকে সামলিয়ে রাখা কষ্টকর হচ্ছিলো। তবুও এক কদম এগিয়ে কিছু একটা মনে করে তিন কদম পিছিয়ে গেলাম।
দূর থেকেই ছায়ার বিভিন্ন লোকের কাছে সামান্য খাবারের জন্য হাত পাতা দেখতেছিলাম। আমি কেন কিছু করতে পারছি না? কেন তার চোখের জল আমার সহ্য হচ্ছে?
মনের কোণায় কতটুকু পরিমাণ অভিমান জমলে একটা মানুষ আমার মত পাষাণ হতে পারে। হঠাৎই দেখলাম একটি হোটেলের পিচ্চি ছেলে। ছেলেটি সেখানে টেবিল মোছা ও গ্লাস ধুয়ার কাজ করে হয়তো!! Prrbook
Upworkmarket
postmaster
topguru
monstarpublic
usamarking
powerbank
cutly
Redifiv
bookstar
link Youtubbook
tumblrro
Postmind
Probook
SocialMarking
Prrmarsub
Hastagcode
Wortweb
wwwsmbook
quora-answer
curred-add
wordpress-wo
classifiedsa
Top-Backlinks
Aliexpress
Twin-M
F-s-a-m-f
Gabsocialm
Temp Mail
ছেলেটি এসে ছায়াকে সামান্য কিছু খাবার দিল। আর ছায়া সেটা মনের আনন্দে গ্রহন করলো। অদ্ভুত নিষ্ঠুর পৃথিবী বাইরে থেকে যতটা সুন্দর তা ভেতর থেকে ততটাই অসুন্দর।
স্টেশনে এত মানুষ কিন্তু কেউ কারো দিকে তাকিয়ে দেখার একটু সুযোগ নেই। যে যার যার মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে।
যাই হউক আমি যে ছায়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম সেটা একজন বৃদ্ধ চাচা ঠিকই খেয়াল করেছে। যখন তার দোকানের সামনে গিয়ে বসলাম তখন তার দোকান ফাঁকাই ছিল।
চাচা আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
কি বাবা অনেকক্ষণ যাবত দেখতেছি তুমি ঐ মেয়েটির দিকে নজর রাখছো? কি চাও বলো তো? (চাচা)
চাচা আমি শুধু এটাই জানতে চাই, যে মানুষটা এত সুখ শান্তিতে ছিল তার এমন পরিণতি কেন? আর সে এই স্টেশনেই বা কত দিন? (আমি)
এত কিছু জেনে তুমি কি করবে বাবা? মেয়েটির সাথে বাজে কিছু করার চিন্তাভাবনা নাকি? (চাচা)
চাচা যদি এতই নিষ্ঠুর মন হতো না আমার? তাহলে সেটা অনেক আগেই করে ফেলতাম। ওকে আমি আরো নয় বছর আগে থেকে চিনি। (আমি)
তাহলে সামনে যাও!!! কথা বলো ওর সাথে? এমন অবস্থায় ওর তো কেউ প্রয়োজন। (চাচা)
চাচা একটি ঝড়ে ছিন্নবিচ্ছিন্ন একটি মানুষ। এত সহজেই কি সবটা বলবে? আমাকেই সবটা খুঁজে বের করতে হবে। প্লিজ জানলে বলেন না? (আমি)
তোমার কথায় কেন জানি হৃদয় পুড়া অনুভূতি আসছে। তাই বলা যায় তোমায়। মেয়েটি অতীত সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। কিন্তু সাত মাস আগেই মেয়েটি এখানে আসে। মেয়েটির অবস্থা খুবই করুন ছিল। দেখে মনে হয়েছে খুব নির্যাতন চলেছে ওর উপর। ওকে জিজ্ঞেস ও করেছিলাম। শুধু বলেছে," টাকা দিয়ে সুখী করতে চেয়েছিল বাবা। হ্যা সুখী আছি অনেক। আমার মতো সুখী আর কেউ নেই।" যতজনই ওকে ওর অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে ও শুধু এ কথাই বলেছে। আর এই স্টেশনে তারপর থেকেই ওকে সবাই পাগল বলে। (চাচা)
আমি চাচার সাথে আর কথা বাড়াই না। উঠে হাঁটতে থাকি। পিছন থেকে উনি অনেক ডেকেছিল তবে আমি আমার মধ্যেই ছিলাম না।
সারাদিন জনমানবহীন একটা জায়গায় বসে কাটিয়ে দেই। বসে বসে আমি কি ভেবেছি সেটা আমার কাছেও অজানা।
তবে রাতে সেই বাড়িতে ফিরি। এত রাতে ফেরাট কারণে শুরু হয় তাদের বকাবকি। তবে সেসবে কান না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যাই।
ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসি।
চলবে.......
(বিদ্রঃ ভালো সাড়া পেলে নেক্সট পর্ব কাল বিকাল পাঁচ টায় দেব সাথে থাকুন ধন্যবাদ)
সবার আগে গল্প পড়তে চাইলে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট বা ফলোয়ার দিয়ে রাখতে পারেন
Comments
Post a Comment